আবর্তন কাকে বলে | আবর্তনের নিয়ম | Rules of Conversion in Philosophy

অবরোহ যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকার হিসেবে অমাধ্যম অনুমানের একটি বিভাগ হল আবর্তন। তাই আমরা আবর্তন কাকে বলে এবং আবর্তনের নিয়ম (Rules of Conversion) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আবর্তন কাকে বলে | What is Conversion

অমাধ্যম যুক্তির একটা প্রকার হল আবর্তন। আবর্তনের ক্ষেত্রে একটিমাত্র আশ্রয় বাক্য থেকে নিয়ম অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়। এই যুক্তিতে আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্য পদ সিদ্ধান্তের বিধেয় পদে পরিণত হয় এবং আশ্রয়বাক্যের বিধেয় পদ সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য পদ হয়ে যায়। বাক্য দুটির অর্থ এবং গুণের কোনো পরিবর্তন হয় না।

আবর্তনের সংজ্ঞা :

অবরোহ মূলক অমাধ্যম অনুমানের ক্ষেত্রে প্রদত্ত আশ্রয় বাক্যের উদ্দেশ্য সিদ্ধান্তের বিধেয় হয় ও আশ্রয়বাক্যের বিধেয় যখন সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হয় এবং গুণ একই থাকে তখন তাকে আবর্তন বলা হয়।

এক্ষেত্রে আশ্রয় বাক্যের উদ্দেশ্যটি সিদ্ধান্তের বিধেয়তে এবং আশ্রয় বাক্যের বিধেয়টি সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্যে অবস্থান করে। এক্ষেত্রে আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্তের বাক্যের অর্থ এবং গুণের কোনরূপ পরিবর্তন করা হয় না।

আবর্তনকে অমাধ্যম অনুমান বলার কারণ হল যে, অমাধ্যম অনুমানে একটিমাত্র আশ্রয় বাক্য থেকে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়। আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্তের মাঝখানে অন্য কোন তৃতীয় বাক্য মাধ্যম হিসেবে থাকে না।

আবর্তনের আশ্রয় বাক্যকে বলা হয় আবর্তনীয় এবং আবর্তনের সিদ্ধান্তকে বলা হয় আবর্তিত

যেমন – I – কোন কোন S হয় P (আবর্তনীয় )

.’. I – কোন কোন P হয় S (আবর্তিত)

আবার, I – কোন কোন কবি হয় সাহিত্যিক (আবর্তনীয় )

.’. I – কোন কোন সাহিত্যিক হয় কবি (আবর্তিত)

উক্ত বচনটির আবর্তনের ক্ষেত্রে আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্য ‘কবি’ যা সিদ্ধান্তের বিধেয় হয়েছে এবং আশ্রয় বাক্যের বিধেয় ‘সাহিত্যিক’ সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হয়েছে। আশ্রয় বাক্যটিকে আমরা আবর্তনীয় এবং সিদ্ধান্তকে আবর্তিত এরূপে ব্যক্ত করেছি। সুতরাং যুক্তিটি আবর্তনের একটি দৃষ্টান্ত।

আবর্তনের নিয়ম |Rules of Conversion

আবর্তনের ক্ষেত্রে যে নিয়মগুলি আবশ্যিক সেগুলি তার সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যার উপর নির্ভরশীল। আবর্তনের নিয়ম গুলি (Rules of Conversion) নিম্নলিখিত –

ক) প্রদত্ত আশ্রয় বাক্যের উদ্দেশ্য সিদ্ধান্তে বিধেয় হবে।

খ) প্রদত্ত আশ্রয় বাক্যের বিধেয় সিদ্ধান্তে উদ্দেশ্য হবে।

গ) আবর্তনীয় এবং আবর্তিত এ দুটি বচনের গুণ এক থাকবে। অর্থাৎ আশ্রয়বাক্য সদর্থক বচন হলে সিদ্ধান্ত সদর্থক বচন হবে এবং আশ্রয়বাক্য যদি নঞর্থক বচন হয় তাহলে সিদ্ধান্ত অবশ্যই নঞর্থক বচন হবে।

ঘ) যে পদ আশ্রয় বাক্যে ব্যাপ্য হয়নি তা সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারে না।

বিভিন্ন প্রকার বচনের আবর্তনের মাধ্যমে ও উদাহরণ সহ আবর্তনের নিয়মগুলির (Rules of Conversion) ব্যাখ্যা ও বিস্তার নিম্নলিখিত –

A বচনের আবর্তন

A – সকল বিবাহিত হয় পুরুষ(আবর্তনীয় )

.’. I – কোন কোন পুরুষ হয় বিবাহিত (আবর্তিত)

ব্যাখ্যাঃ উক্ত আবর্তনীয় বচনের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য পদ ‘বিবাহিতসিদ্ধান্তে বিধেয় পদ হয়েছে। আবর্তনীয় বচনের বিধেয় পদ ‘পুরুষ’ আবর্তিত বচনের উদ্দেশ্য পদ হয়েছে। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তে I বচনের পরিবর্তে A বচন হলে গুণ অভিন্ন থাকতো কিন্তু আবর্তনের নিয়ম লঙ্ঘিত হতো। আবর্তনের চতুর্থ নিয়মে বলা আছে যে পদ আশ্রয় বাক্যে ব্যাপ্য হয়নি তা সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারবে না। কিন্তু সিদ্ধান্ত যদি A বচন হতো তাহলে স্বভাবতই উদ্দেশ্যটি ব্যাপ্য হয়ে যেত। এবং আশ্রয়বাক্যে যে পদ ব্যাপ্য নয় তা সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়ে যেত।সুতরাং A বচনের আবর্তন I বচন।

E বচনের আবর্তন

E – কোন পাখি নয় পশু (আবর্তনীয় )

.’. E – কোন পশু নয় পাখি (আবর্তিত)

ব্যাখ্যাঃ এক্ষেত্রে আবর্তনীয় বচনের উদ্দেশ্য পদ ‘পাখি’ আবর্তিত বচনের বিধেয় পদ হয়েছে এবং আবর্তনীয় বচনের বিধেয় পদ ‘পশু’ আবর্তিত বচনের উদ্দেশ্য পদ হয়েছে। আবর্তনীয় এবং আবর্তিত উভয়ে বচনই নঞর্থক হয়েছে। আবর্তনীয় বচনের উদ্দেশ্য পদ ‘পাখি’ এবং বিধেয় পদ ‘পশু’ দুটিই ব্যাপ্য হয়েছে। সেক্ষেত্রে আবর্তিত বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয়পদ ব্যাপ্য হয়েছে।সুতরাং E বচনের আবর্তন E বচন।

I বচনের আবর্তন

I – কোন কোন গায়ক হয় পরোপকারী (আবর্তনীয় )

.’. I – কোন কোন পরোপকারী হয় গায়ক (আবর্তিত)

ব্যাখ্যাঃ এই আবর্তনীয় বচনের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য পদ ‘গায়ক সিদ্ধান্তে বিধেয় পদ হয়েছে। আবর্তনীয় বচনের বিধেয় পদ ‘পরোপকারী’ আবর্তিত বচনের উদ্দেশ্য পদ হয়েছে। আবর্তনীয় এবং আবর্তিত উভয় বচন সদর্থক হয়েছে। আবর্তনীয় এবং আবর্তিত দুই-ই I বচন হওয়ায় কোন পদ ব্যাপ্য হয়নি।সুতরাং I বচনের আবর্তন I বচন।

O বচনের আবর্তন

O – কোন কোন সন্ন্যাসী নয় তীর্থযাত্রী (আবর্তনীয় )

.’. O – কোন কোন তীর্থযাত্রী নয় সন্ন্যাসী (আবর্তিত)

ব্যাখ্যাঃ এক্ষেত্রে আবর্তনীয় বচনের উদ্দেশ্য পদ ‘সন্ন্যাসী’ আবর্তিত বচনের বিধেয় পদ হয়েছে এবং আবর্তনীয় বচনের বিধেয় পদ ‘তীর্থযাত্রী’ আবর্তিত বচনের উদ্দেশ্য পদ হয়েছে। আবর্তনীয় ও আবর্তিত বচন দুটি নঞর্থক বচন হয়েছে। আবর্তিত বচনটি O বচন হওয়ায় বিধেয় পদ ‘সন্ন্যাসী’ ব্যাপ্য হয়েছে। অথচ আবর্তনীয় বচনের ক্ষেত্রে ‘সন্ন্যাসী’ পদটি উদ্দেশ্য হওয়ার কারণে ব্যাপ্য হয়নি। তাই এরূপ হল আবর্তনের নিয়মবিরুদ্ধ। নিয়ম অনুসারে যে পদ আশ্রয় বাক্যে ব্যাপ্য নয় তা সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারেনা। কিন্তু O বচনের ক্ষেত্রে সেরূপ ঘটায় O বচনের আবর্তন তাই অসম্ভব।

আরোও পড়ুন – Click here

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায়, আবর্তনের যে সমস্ত নিয়মগুলি রয়েছে তা চারটি বচনের সবকটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বা যথাযথ নয়।
কারণ O বচনের ক্ষেত্রে আবর্তনের নিয়ম (Rules of Conversion) লঙ্ঘিত হচ্ছে। সর্বোপরি A, E এবং I ইত্যাদি বচন গুলির আবর্তন সম্ভব হলেও O বচনের আবর্তন সম্ভব নয়

তথ্যসূত্র (References)

  • A Critical History of Modern Philosophy: Y.H. Masih
  •  A History of Philosophy: F. Thilly
  • A History of Modern Philosophy: W.K. Wright
  •  A Critical History of Western Philosophy: D.J. O’Connor
  • History of Western Philosophy: B. Russell
  •  History of Modern Philosophy: R. Falckenberg
  • Internet Sources

প্রশ্ন – আবর্তনীয় কাকে বলে ?

উত্তর – আবর্তনের যুক্তি বাক্যকে আবর্তনীয় বলা হয়।

প্রশ্ন – বিরুদ্ধ পদ কি ?

উত্তর – বিরুদ্ধ পদ হল কোন প্রদত্ত পদের বিপরীত।
যেমন – ‘মানুষ’ এই প্রদত্ত পদের বিপরীত বা বিরুদ্ধ পদ হল ‘অ-মানুষ’।

প্রশ্ন – আবর্তিত কাকে বলে ?

উত্তর – আবর্তনের সিদ্ধান্ত বাক্যকে আবর্তিত বলা হয়।

প্রশ্ন – প্রতিবর্তনের আশ্রয়বাক্যকে কি বলা হয় ?

উত্তর – প্রতিবর্তনের আশ্রয়বাক্যকে প্রতিবর্তনীয় বলা হয়।

প্রশ্ন – অনুমান কত প্রকার ও কি কি ?

উত্তর – অনুমান দুই প্রকার।যথা – ক) মাধ্যম অনুমান খ) অমাধ্যম অনুমান ।

1 thought on “আবর্তন কাকে বলে | আবর্তনের নিয়ম | Rules of Conversion in Philosophy”

Leave a Comment