অবৈধ সাধ্য দোষ কাকে বলে | Fallacy of Illicit Major

অবৈধ সাধ্য দোষ (Fallacy of Illicit Major) হল নিরপেক্ষ ন্যায়ের যে নিয়ম ভঙ্গজনিত দোষগুলি রয়েছে তাদের মধ্যে একটি । এই অবৈধ সাধ্য দোষটি ঘটে ন্যায় অনুমানের চতুর্থ নিয়ম লঙ্ঘিত হওয়ার কারনে।

অবৈধ সাধ্য দোষ | Fallacy of Illicit Major

যে পদ সিদ্ধান্তের বিধেয়স্থানে থাকে সেই পদকে সাধ্য পদ (Major term) বলা হয়। এই সাধ্যপদ আবার সাধ্য আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্যস্থানে অথবা বিধেয় স্থানে থাকতে পারে।যে আশ্রয়বাক্যে সাধ্য পদ থাকে সেই আশ্রয়বাক্যকে বলে সাধ্য আশ্রয়বাক্য।

ন্যায় অনুমানে চতুর্থ নিয়ম অনুযায়ী, যে পদ আশ্রয় বাক্যে ব্যাপ্য হয়নি তা সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারে না। অর্থাৎ কোন পদ যদি সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয় তাকে অবশ্যই আশ্রয় বাক্যে ব্যাপ্য হতে হবে। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে ন্যায়ের যুক্তিতে দুটি দোষ ঘটতে পারে। তার মধ্যে একটি হল অবৈধ সাধ্য দোষ (Fallacy of Illicit Major)।

অবৈধ সাধ্য দোষ

কোন যুক্তিতে সাধ্যপদ যখন সাধ্য আশ্রয় বাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়, তখন যুক্তিটিকে অবৈধ সাধ্য দোষ বলে।অর্থাৎ সিদ্ধান্তে সাধ্যপদ ব্যাপ্য হয়েছে অথচ তা যদি আশ্রয় বাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে থাকে তাহলে তাকে বলা হয় অবৈধ সাধ্য দোষ (Fallacy of Illicit Major)।

অবৈধ সাধ্য দোষ বলতে বোঝায় যখন কোনো যুক্তির সিদ্ধান্ত-এর পদটি প্রধান হেতুবাক্য-এর পদটির চেয়ে বেশি ব্যাপক হয়।

  • কবিরা মরণশীল, পাখিরা কবি নয়। অর্থাৎ পাখিরা মরণশীল নয়।

যুক্তিটির আকার –

প্রধান হেতুবাক্য: A – সকল কবি হয় মরণশীল।

অপ্রধান হেতুবাক্য: E – কোন পাখি নয় কবি।

সিদ্ধান্ত: .’. E – কোন পাখি নয় মরণশীল।

উপরোক্ত যুক্তিটি অবৈধ সাধ্য দোষে দুষ্ট। কারণ সাধ্য পদ হেতু বাক্যে ব্যাপ্য হয়নি কিন্তু সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়েছে। এমনটা ন্যায়ের নিয়মবিরুদ্ধ হওয়ায় তা দোষ দুষ্ট হয়েছে। নিয়ম অনুসারে সিদ্ধান্তে যে পদ ব্যাপ্য হবে, আশ্রয়বাক্যে সেই পদকে ব্যাপ্য হতে হবে। যুক্তিটিতে এই নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। সিদ্ধান্তে সাধ্যপদ ‘মরণশীল’ ব্যাপ্য হয়েছে।যেহেতু A বচনের উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য এবং বিধেয় পদ অব্যাপ্য। তাই আশ্রয়বাক্যে A বচনের বিধেয় স্থানে ‘মরণশীল’ এই সাধ্যপদটি থাকায় তা ব্যাপ্য হয়নি। বরং এক্ষেত্রে সাধ্যপদটি অব্যাপ্য হয়েছে। কাজেই যুক্তিটি অবৈধ সাধ্য দোষে (Fallacy of Illicit Major) দুষ্ট হয়েছে।

এই যুক্তিতে, সিদ্ধান্ত প্রধান হেতুবাক্য-এর চেয়ে বেশি ব্যাপক।এই দোষের কারণে, এই যুক্তি অকার্যকর।

  • সব শিক্ষিত ব্যক্তি উন্মত্ত, অমল নয় শিক্ষিত ব্যক্তি। সুতরাং অমল নয় উন্মত্ত।

যুক্তিটির আকার –

প্রধান হেতুবাক্য: A – সকল শিক্ষিত ব্যক্তি হয় উন্মত্ত।

অপ্রধান হেতুবাক্য: E – অমল নয় শিক্ষিত ব্যক্তি।

সিদ্ধান্ত: .’. E – অমল নয় উন্মত্ত।

এই যুক্তিতেও অবৈধ সাধ্য দোষ হয়েছে। কেননা এখানে সাধ্য পদ ‘প্রাণী’ অপ্রধান আশ্রয় বাক্যে A বচনের বিধেয় হওয়ায় তা ব্যাপ্য হয়নি কিন্তু সিদ্ধান্তে A বচনের উদ্দেশ্য হওয়ায় তা ব্যাপ্য হয়েছে। নিয়ম অনুসারে যে পদ আশ্রয় বাক্যে ব্যাপ্য নয় তা সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারবে না। যদি তা হয় তবে সেটি দোষ দুষ্ট হবে। এ কারণে এখানে অবৈধ সাধ্য দোষ (Fallacy of Illicit Major) ঘটেছে।

এই যুক্তিতেও সিদ্ধান্ত প্রধান হেতুবাক্য এর চেয়ে বেশি ব্যাপক হয়েছে।

এই দোষ এড়াতে, সিদ্ধান্ত-এর পদটিকে প্রধান হেতুবাক্য-এর পদটির চেয়ে কম বা সমান ব্যাপক হতে হবে।

অবৈধ সাধ্য দোষের ভ্রান্তি

প্রধান ধারণা:  সকল মানুষ হয় মরণশীল।

মধ্যবর্তী ধারণা: হিউম হয় একজন মানুষ।

ফলাফল:  হিউম হয় মরণশীল।

এই যুক্তিটি অবৈধ সাধ্য দোষে (Fallacy of Illicit Major) দুষ্ট কারণ সিদ্ধান্তে সাধ্যপদটি ব্যাপ্য অথচ প্রধান হেতুবাক্যে সাধ্যপদটি ব্যাপ্য নয়।হিউম যে মরণশীল,তা কিন্তু শুধুমাত্র মানুষ হওয়ার কারণে নয়।আরও বিভিন্ন প্রানী,পশু ইত্যাদি মরণশীল হতে পারে।

অবৈধ সাধ্য দোষ এড়ানোর উপায় –

অবৈধ সাধ্য দোষ এড়ানোর জন্য কিছু সর্তকতার প্রয়োজন।অবৈধ সাধ্য দোষ (Fallacy of Illicit Major) সম্পর্কে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আমরা ভুল যুক্তি থেকে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া এড়াতে পারি।

১) মধ্যবর্তী ধারণার সত্যতা প্রমাণ করতে হবে।

২) ফলাফলের অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ বিবেচনা করতে হবে।

৩) যুক্তিতে সিদ্ধান্ত-এর পদ হেতুবাক্য-এর পদের চেয়ে কম ব্যাপক হলে যুক্তি কার্যকর হবে।

উপসংহার

অবৈধ সাধ্য দোষ (Fallacy of Illicit Major) হল যুক্তির একটি ত্রুটি যেখানে মধ্যবর্তী ধারণার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য কেবলমাত্র ফলাফলের সত্যতা ব্যবহার করা হয়।ন্যায় অনুমানের চতুর্থ নিয়ম এখানে লঙ্ঘন হওয়ায় এই সাধ্য দোষের উৎপত্তি হয়।সাধ্যপদ অপ্রধান যুক্তিবাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়।ফলত এটি ন্যায় অনুমানের নিয়ম বিরুদ্ধ।অবৈধ সাধ্য দোষের কারণে যুক্তির সিদ্ধান্তটি ভুল হয়। ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে এবং ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

আরোও পড়ুন – Click here

তথ্যসূত্র (References)

  • History of Western Philosophy: B. Russell
  •  History of Modern Philosophy: R. Falckenberg
  • Encyclopedia of Philosophy: P. Edwards (ed.)
  • The Fundamental Questions of Philosophy: A.C. Ewing
  • Internet Sources

প্রশ্ন – ন্যায় অনুমানের বচন তিনটির নাম কি কি?

উত্তর – ন্যায় অনুমানে বচন তিনটি নাম হল – ১) প্রধান হেতুবাক্য বা সাধ্য আশ্রয়বাক্য ২) অপ্রধান হেতুবাক্য বা পক্ষ আশ্রয়বাক্য এবং ৩) সিদ্ধান্ত।

প্রশ্ন – ন্যায় অনুমানের সাধ্যপদ কোন কোন স্থানে থাকে?

উত্তর – ন্যায় অনুমানের সাধ্যপদ থাকে – প্রধান আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তে।

Leave a Comment